রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, “সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে/ সহজ কথা যায় না বলা সহজে…” সহজ কথা হয়ত সত্যিই সহজে বলা যায় না, তাই নিজের কথা লিখতে গিয়ে কী যে লিখব সেটাই বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিষয়ের বাইরে গিয়ে একেবারে নতুন কিছু তৈরি করা বা গড়ে তোলা মোটেও সহজ কাজ নয়। কত সময় কত কথাই তো মনের মধ্যে বুজগুড়ি কাটে কিন্তু কতটা সার্থকভাবে তা প্রকাশ করা যায়? লিখতে গেলেই ভাষার প্রকাশ খানিকটা এলোমেলো হয়ে যায়। এলোমেলো শব্দকে সঠিক বিন্যাসে সাজানোই সম্ভবত আসল চ্যালেঞ্জ।
কবিতার কথাই ধরা যাক। বলা হয়ে থাকে, একটা বয়সে গিয়ে সব বাঙালিই কবি হয়ে যায়। তাহলে জীবনানন্দ দাসকে কেন বলতে হয়েছিল, “সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি…” তার কারণ শব্দের পাশে শব্দ বসিয়ে বাক্য ঠিকই গড়ে তোলা যায় কিন্তু সেটা কাব্যে রূপ নিতে আরও বেশ কিছু আলোকবর্ষ পার হয়ে আসতে হয়। ভাষা নিয়ে সারাজীবন কাজ করেও একলাইন কাব্য সৃষ্টি করতে না পেরে হা হুতাশ করেছেন বহু মানুষ। আর যাঁরা পেরেছেন, তাঁদের ভাব নিজের মনের গণ্ডী পেড়িয়ে ছড়িয়ে গেছে চারদিকে।
আমাদের সবার জীবনে প্রথম কবিতা বোধহয় লেখা হয় অক্ষরজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গেই। অন্তত একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত কাব্যামোদ বাঙালীকে গ্রাস করে রাখে। পরে সময়ের সঙ্গে কারও জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠে কবিতা আবার কারও বা বিস্মৃত ইতিহাসের মতো পুরনো ডায়েরির পাতার ভাঁজে ক্রমশ বিবর্ণ হতে থাকে।
এবারের বাংলা ব্লগে থাকবে তিনজনের লেখা তিনটি কবিতা। তিনভাবে তিনদিক থেকে জীবনকে দেখা, কোনও মুহূর্তকে ছুঁয়ে আসা। দিনান্তে হয়ত সবাই শেষে ভালোবাসার কথাই বলেছে কিন্তু “ভালোবাসা এই চতুষ্পদ”-কে যে কতরকমভাবে, কত আলাদাভাবে দেখা যেতে পারে তারই সুস্পষ্ট ছবি এই তিনটি কবিতা…
স্মৃতির ছোঁয়ায় (Touching the memories)
by
সমীর কুমার মন্ডল (Samir Kumar Mondal)
মনের মাঝে স্মৃতির পটে
পুরনো সব ছবি
সেই ছবিতে আবছা ফোটে
পূবের উদিত রবি।
স্মৃতির পটে আজো দেখি
সুখী মনের ছায়া
হারিয়ে ফেলায় সেই শুভদিন
মনে জাগে মায়া।
স্মৃতি মোদের কাঁদায় হাসায়
যখন যেমন তেমন,
আনন্দ যে পাই স্মৃতির পটে
সুখটা মনের মতন
স্মৃতি যেন ঘন কালো
কালবৈশাখী ঝড়,
সেই ঝড়েতেই মন ভেঙ্গে যায়
মন করে কড় কড়…
মর্মে মোদের যখন জাগে
আলো সুখের ছায়া,
স্মৃতি এসে ঠিক তখনই
জাগায় মনে মায়া।
স্মৃতির তরে কখনও আবার
মনে যে পাই বল।
দুঃখের দিনেও সুখ খুঁজে পাই
এতো স্মৃতির ছল।
স্মৃতি মোদের নতুন করে
দেখায় আশার আলো,
সেই আলোতেই স্মৃতি আবার
ঘনায় ঘন কালো…
বিদায় প্রেয়সী (“Goodbye My Lover”)
by
সুমন মন্ডল (Suman Mandal)
সেদিন দেখেছিলাম তোমাকে জানালায়
খোলা চুলে দাঁড়িয়েছিলে,
আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন একটা খুঁজছিলে,
হয়ত কোনও ছবি আঁকছিলে…
তুমি আমাকে খেয়াল করনি
তোমার চুলের গন্ধে আসক্ত হয়ে
আমি তোমার পিছনেই দাঁড়িয়েছিলাম,
তোমাকে ছোঁওয়ার সাহস হয়নি।
ভেবেছিলাম তুমি হয়ত বুঝতে পারবে
আমার উপস্থিতি, কিন্তু তুমি
আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন একটা খুঁজছিলে,
হয়ত কোনও ছবি আঁকছিলে…
তোমার সাথে আগে এরকম রোজই দেখা হত
কখনও গড়িয়াহাটায়, কখনও বই পাড়ায়
তুমি আমাকে দেখনি, নাকি
দেখেও না দেখার অভিনয় করতে….
আজ তোমাকে খুব শান্ত লাগছে
ঠিক যেমন পৌষমাসের রাতে, রাত শান্ত থাকে
ঠিক যেমন দিনের আলোয় খদ্যোৎ শান্ত থাকে
ঠিক যেমন, আজ আমি শান্ত আছি।
কী হয়েছে তোমার, আমাকে বল
আমি শুনব, আমি ক্লান্ত হব না
আমার কাঁধে মাথা রাখতে পারো
কাঁদতে পারো যতক্ষণ, যতদিন মন চায়…
কিন্তু তুমি একবারও ফিরে তাকালে না।
গবাক্ষের মরচে পড়া শিক ধরে
আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন একটা খুঁজছিলে,
হয়ত কোনও ছবি আঁকছিলে…
সেই সকাল থেকে চায়ের কাপ পরে রয়েছে
একটা চুমুকও দাওনি,
কাল রাতের খাবার, এখনও ঢাকা
একবারও খুলে দেখনি
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল
ফেরিওয়ালা তার স্বপ্ন বেচে বাড়ি চলে গেল
তুমি সেই একইভাবে খোলা চুলে দাঁড়িয়ে
সেই একইভাবে তাকিয়ে,
আমিও দাঁড়িয়ে রয়েছি অপেক্ষায়
জানি তুমি একবার ফিরে তাকাবে, কিন্তু তুমি
আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন একটা খুঁজছিলে,
হয়ত কোনও ছবি আঁকছিলে
এই সেই নীল শাড়িটা না,
আমি প্রথম দেখেছিলাম তোমাকে, হয়ত তুমিও আমাকে,
চায়ের দাগটা এখনও যায়নি আঁচল থেকে
আমার জামাতেও রয়েছে, এই দেখ
আকাশে মেঘ করেছে, বৃষ্টি হবে
আজ আমিও ভেসে যাবো, মিলিয়ে যাবো গঙ্গায়
আর মাত্র ১২ দিন আছি
রাই, একবার পিছন ফিরে তাকাও
বৃষ্টি নামলো, তুমি এখনও দাঁড়িয়ে
একটা গাল ভেজালো বৃষ্টি, চোখের জলে ভিজলে তুমি।
আমার ডাকে তুমি সাড়া দিলে না
সকালের চা, পিঁপড়ে খেয়ে চলে গেল…
সেদিন তুমি আর তাকালে না
একবারও পিছন ফিরে দেখলে না, শুধু
আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন একটা খুঁজছিলে,
হয়ত কোনও ছবি আঁকছিলে….
বিলাপগাঁথা (The Saga of Pain)
by
পামেলা ভট্টাচার্য (Pamela Bhattacharya)
সেদিন তোমার জন্মদিনে
খুঁজে পাইনি খাতা,
শোনাতে চেয়েও পারিনি, শুধু…
থাক বাকি সেই কথা।
সময় ঘুরে মিনিট চলে
দুপুর সেরে রাত,
গালিব শুধু তুমিই ছিলে
মেহফিল… ক্যায়া বাত।
এবার আমি জন্ম নেব
মাত্র দুমাস দূরে,
তুমি তখন অন্য কারো
নিঃশ্বাস বুক জুড়ে।
জন্মদিনে খুঁজব আমার
পুরোনো সেই খাতা।
হাত ছুঁয়ে যদি বলেই ফেলি
ইশশ… তুমি না যা তা…
লজ্জামাখা ইচ্ছেগুলো
বড্ড জ্বালায় রোজ,
জানি তুমি যাবেই চলে
খাতাটারও নেই খোঁজ….
***This is the first Original Content in Bengali for the Blog. I would like to thank my fellow teammates Suman Mandal and Samir Kumar Mondal for their valuable contribution.
January 14, 2019 — magnon